কুষাণ যুগের ইতিহাস | Kushana Period | Ancient Indian History

 Ancient Indian History | Kushana Period

কুষাণ যুগের ইতিহাস

gkghor.in
Ancient Indian History | Kushana Period | History Question Answer

বন্ধুরা, 

এই পর্বে আমরা প্রাচীন ভারতের ইতিহাস থেকে গুপ্তোত্তর কুষাণ যুগের ইতিহাসের উপর সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেখে নিব। কুষাণ যুগের বংশাবলী ও সেই যুগের শ্রেষ্ঠ রাজা ও তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি বিভিন্ন বিষয়ে এখানে তুলে ধরা হয়েছে। পরবর্তী পর্বে আমরা কুষাণ সাম্রাজ্যের ইতিহাসের প্রসাশনিক, অর্থনৈতিক, সমাজ ও ধর্ম বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করবো। আপনারা অবশ্যই আমাদের দ্বিতীয় পর্ব অর্থাৎ প্রাচীন ভারতের ইতিহাস এর উপর আলোচিত কুষাণ সাম্রাজ্যের ইতিহাসের দ্বিতীয় পর্ব টি দেখে নিবেন। এই পর্বের প্রত্যেকটি বিষয় আপনাদের বিভিন্ন রকম প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।   আপনাদের আসন্ন বিভিন্ন রকম প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষা, wbcs, wbpsc, upsc, wbp si, wbp, ssc, ugc net, set, cgl, rail, primary tet, c-tet, school service Commission, group d & c, এবং combined পরীক্ষার জন্য খুবই সাহায্য করবে। 

          

                                                               

 কুষাণ সাম্রাজ্য (Kushana Empire) :

কুষণরা ছিলন ইউ চি উপজাতির এক শাখা ।ইউ চি উপজাতি একসময় চৈনিক তুর্কিস্তানের কান সু অঞ্চলে বাস করতেন। যে দলপতির নেতৃত্বে কুশানরা সর্বপ্রথম ব্যাকটেরিয়া অঞ্চলে এক স্বাধীন-সার্বভৌম, রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করেন তার নাম মি আওস। ঘটনা কাল খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতকের শেষার্ধে। কান সু অঞ্চলের একদিকে ছিল সেন হুয়াং রাজ্য, অন্যদিকে ছিল কি লিয়েন পর্বতশ্রেণী।

রাজনৈতিক ইতিহাস : 

পল্লবদের হটিয়ে যারা আফগানিস্তান ও উত্তর-পশ্চিম ভারতের ভাগ্যবিধাতা হলেন, কালক্রমে উত্তর ও পূর্ব ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের আধিপত্য অর্জন করলেন ভারতবর্ষের ইতিহাসে তারা কুশান নামে পরিচিত। বিদেশি এই কুশানরা বিজয়ীর বেশে বিদেশি ভাব ও সংস্কৃতির বাহক রূপে ভারতে এসেছিলেন। কিন্তু এদেশে দীর্ঘকাল অবস্থানকালে এদেশের রীতিনীতি, সভ্যতা-সংস্কৃতি গ্রহণ করে ভারতীয়গনের সঙ্গে তারা একাত্ম হয়ে যান। কুশানরা ভারতীয় হয়ে  যান। কিন্তু ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিবর্তনে তারা স্মরণীয় অবদান রেখে গেছেন।

এখন আমরা কুষাণ যুগের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ শাসকদের সম্পর্কে নিচে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করবো।  

       

কুজুল কদফিসেস : 

চিনা সাহিত্যে কিউ সিউ কিও বলে যার উল্লেখ, মুদ্রায় তিনি কুজুল কদফিসেস নামে পরিচিত। কুজুলের রাজ্যের বিস্তৃতি সম্পর্কে ঐতিহাসিকরা ভিন্ন মত পোষণ করেন। চিনা সাহিত্য হতে জানা যায় কাবুল কান্দাহার কুজুলের রাজ্য ভুক্ত ছিল। সিন্ধু নদীর পশ্চিমে পঞ্চতরে একখানি লেখা পাওয়া গেছে। কুজুলের মুদ্রায় এক যোগীর মূর্তি উৎকীর্ণ আছে। সম্রাট টাইবেরিয়াস এর মুদ্রার অনুকরণে মুদ্রা উৎকীর্ণ করেন। রোমান সম্রাটদের সমকালীন ছিলেন কুজুল।

 বিম কদফিসেস : 

দ্বিতীয় কদফিসেস ছিলেন শিবভক্ত। সিংহাসনে আরোহন করেই ভারতের দিকে দৃষ্টি দেন। অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই তিনি তক্ষশীলা ও পাঞ্জাব অধিকার করেন। তার একখানি বৃহদায়তন প্রস্তুর মূর্তি মথুরার সন্নিকটে আবিষ্কৃত হয়েছে। বিম কডফিসেস এর রাজত্বকালে উৎকীর্ণ বেশ কিছু সোনা ও তামার মুদ্রা আবিষ্কৃত হয়েছে। সামরিক নৈপুণ্যের সঙ্গে আর্থিক সমৃদ্ধির সহযোগে কুশান শক্তি দুর্বার অপ্রতিরোধ্য শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে।

 প্রথম কনিষ্ক (Kanishka I) :

দ্বিতীয় কদফিসেস এর মৃত্যুর পর প্রথম কনিষ্ক কুশান রাজ্যের অধিপতি হন। দুঃখের বিষয় পূর্ববর্তী রাজার সঙ্গে কনিষ্কের কি সম্পর্ক ছিল তা আজও জানা যায়নি। তিনি সম্ভবত অধীনস্থ কর্মচারী ছিলেন। কিন্তু পরে প্রভুর মৃত্যুতে ক্ষমতালিপ্সু অন্যান্য প্রতিবন্ধীদের পরাজিত করে নিজের নিরঙ্কুশ আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন। এই বংশের শ্রেষ্ঠ রাজা, প্রথম কনিষ্ক।

কনিষ্কের সময় :

কনিষ্কের সিংহাসন আরোহণের সময় সম্পর্কে ঐতিহাসিকরা বিভিন্ন মত প্রকাশ করেন। স্মিথ, মার্শাল প্রমূখ ঐতিহাসিকরা মনে করেন ১২৫ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ কনিষ্কের রাজত্ব শুরু হয় আর দ্বিতীয় শতকের শেষ পর্বে তার রাজত্বের অবসান হয়। রমেশচন্দ্র মজুমদার মনে করেন কাল চুরি চেদি অব্দ প্রবর্তন করেন। ৭৮ খ্রিস্টাব্দে কনিষ্ক সিংহাসনে আরোহন করেন। তিনি শকাব্দ প্রতিষ্ঠা করেন। কয়েক খানি চিনা  গ্রন্থে কনিষ্ককে দ্বিতীয় শতকের রাজা বলে বর্ণনা করা হয়েছে।

 রাজ্য বিস্তার :

বিশাল এক সাম্রাজ্যের অধিপতি ছিলেন কনিষ্ক। উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ সিন্ধু, পাঞ্জাব, উত্তর প্রদেশের নানা স্থানে কনিষ্কের উৎকীর্ণ লেখ আবিষ্কৃত হয়েছে। তার রাজত্বের প্রথম পর্বের লেখা গুলি উত্তরপ্রদেশে পাওয়া যায়। সারনাথের পূর্বদিকে কনিষ্কের কোন লেখ পাওয়া যায়নি। চীনা ও তিব্বতি গ্রন্থাদিতে কনিষ্কের সাকেত ও পাটলিপুত্রের সামরিক অভিযানের উল্লেখ আছে। আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়া রাজ্য ভুক্ত ছিল তার প্রমাণ আছে। চিনা গ্রন্ধে কনিষ্ক কে খোটান ও খোরাসানের রাজা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অনেকের ধারনা শুধু বিহার নয়, পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যা কনিষ্কের রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল।

প্রশাসনিক বিভাগ :  

প্রশাসনের কাজের সুবিধার জন্য কনিষ্ক তার রাজ্যটিকে কয়েকটি বিভাগে বিভক্ত করেন। তিনি এক একটি বিভাগের শাসনকার্য কখনো একজন, কখনো বা দুজন প্রশাসকের স্কন্ধে ন্যাস্ত করেন। এই প্রশাসকেরা মহাক্ষত্রপ নামে পরিচিত ছিলেন। উত্তর পশ্চিম ভারতে কনিষ্কের অধীনস্থ দুজন ক্ষত্রপ  এর নাম জানা যায়। বারানসি মথুরা অঞ্চলের শাসনকার্য মহাক্ষত্রপ ও ক্ষত্রপ যৌথভাবে পরিচালনা করতেন।

 দ্বিতীয় কনিষ্ক (Kanishka II) :

৪১ রাজ্য বর্ষে উত্তীর্ণ আর এক লেখে কনিষ্ক নামে যোদ্ধা জৈনেক কুশান রাজার কথা বলা হয়েছে। এই লেখাটাতে মহারাজ, রাজাধিরাজ, দেবপুত্র বলে বর্ণনা করা হয়েছে। অনেকের মতে দ্বিতীয় কনিষ্ক কাশ্মীরে কনিস্কপুর নগর প্রতিষ্ঠা করেন। কুশান রাজারা বিদেশি ছিলেন। কিন্তু ভারতীয় প্রজারা যাতে তাদের সহজভাবে গ্রহণ করতে পারে, সেদিকে তাদের সজাগ দৃষ্টি ছিল। উত্তর-পশ্চিম ভারত এবং আফগানিস্তানের কুশানরা বেশিদিন শান্তিতে রাজত্ব করতে পারেননি। খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতকের প্রথম ভাগে পারস্য সাসানিয় রাজবংশ প্রতিষ্ঠিত হয়। এই যুগের রচনা মনুসংহিতাতেও রাজার মাহাত্ম্য কৃতিত্ব রয়েছে। শাসনকার্যে সুবিধার জন্য কুশানরা প্রায়ই সহযোগী প্রশাসক নিযুক্ত করতেন। প্রশাসনের সুবিধার জন্য কুষাণ সাম্রাজ্য কয়টি অঞ্চলে বিভক্ত ছিল।

                                                                                     ভারতের ইতিহাসে কুষাণ যুগ বিশেষভাবে স্মরণীয়।এ সময় ভারতের সঙ্গে একদিকে মধ্য এশিয়া  চীন এবং অন্যদিকে পশ্চিম এশিয়া  রোমান সাম্রাজ্যরনিবিড় যোগসূত্র স্থাপিতহয়| ফলে ব্যবসা বাণিজ্য উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে ভারতীয় সভ্যতা  সংস্কৃতির পরিপুষ্ট সাধন হয় নিজেদের স্বতন্ত্র বিসর্জন দিয়েএদেশে ধর্ম  সাংস্কৃতিকে আশ্রয় করে তারা ভারতের মহামানবের মহাসাগরে বিলীন হয়ে যান।


👉 NEXT PART

Leave a Comment